চারুকলা ভর্তি প্রস্তুতি - পর্ব ০৩

চারুকলা ভর্তি প্রস্তুতি - পর্ব ০৩ ( Study in Fine Arts )

বিগত দুটি পর্বে আমরা জেনেছি কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা নিয়ে পড়াশোনা করা যাবে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ৮ টি বিভাগের পাঠক্রম নিয়ে। আজ এ পর্বে আলোচনা করবো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভর্তি প্রক্রিয়া ও ভর্তি প্রস্তুতি নিয়ে।


ভর্তি প্রক্রিয়া :

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় "চ" ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিবছর ১৩৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে থাকে। ভর্তি পরীক্ষা ২ টি ধাপে হয়ে থাকে। প্রথম ধাপে সকল শিক্ষার্থীকে ৪০ মার্কের সাধারন জ্ঞানের উপরে পরীক্ষা দিতে হবে। পরবর্তীতে এ পরীক্ষা থেকে উত্তীর্ন শিক্ষার্থীদেরকে  ৬০ মার্কের অঙ্কন (ড্রইং) পরীক্ষা দিতে হবে। 

অর্থাৎ : সাধারন জ্ঞান ৪০ + অঙ্কন ৬০ = ১০০ নম্বর
এবং এর সাথে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের প্রাপ্ত নম্বরের ২০% যুক্ত করে সর্বমোট ১২০ নম্বরের মধ্যে মেধা তালিকা প্রস্তুত করা হয়। 

আবেদনের যোগ্যতা এবং আবেদন করার বিস্তারিত জানতে ঢাবি ওয়েবসাইটে চোখ রাখতে পারেন অথবা নিচের পিডিএফ টি ডাউনলোড করে দেখে নিতে পারেন।।


ভর্তি প্রস্তুতি :


একটু আগে জানলাম চারুকলা অনুষদের ভর্তি প্রক্রিয়া ২ টি ধাপে হয়ে থাকে। দুটি ধাপই সমান গুরুত্বপূর্ন হওয়া সত্ত্বেও আমি সাধারন জ্ঞানের অংশের উপর একটু বেশি গুরুত্ব আরোপ করতে বলবো।
কেননা চারুকলা অনুষদে বর্তমানে ২ শ্রেনির মানুষ পরীক্ষা দিয়ে থাকে। প্রথম, যারা চারুকলা নিয়েই পড়তে চায়। আর দ্বিতীয়, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে হলেই হলো,  সাবজেক্ট ব্যাপার না, সেরকম একটা ধরনা নিয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসে।

যেহেতু সাধারন জ্ঞান পরীক্ষা, সেহেতু অন্য অনুষদের প্রস্তুতি নিয়েও কিন্তু যে কেউ এ পরীক্ষায় ভালো করতে পারবে । যেমন : কেউ যদি "ডি" ইউনিটের প্রস্তুতি নেয় সে কিন্তু খুব সহজেই এ সাধারন জ্ঞান অংশে  ভালো ফলাফল করতে পারবে। তাই শুধু ড্রইং জানলেই হবেনা।

যারা সত্যিকারে চারুকলাকে ধারন করে, পড়াশোনা করতে চায় চারুকলায়, তাদের ড্রইং শেখার পাশাপাশি সাধারন জ্ঞানেও জোর দিতে হবে। তা না হলে প্রথম ধাপেই ছিটকে যাবার সম্ভাবনা থেকেই যায়। কেননা সাধারন জ্ঞান পরীক্ষায় উত্তীর্ন  প্রথম ১৫০০ জনকেই অঙ্কন পরীক্ষায় সুযোগ দেয়া হবে।


তো এখন আসি সাধারন জ্ঞানের প্রস্তুতি কিভাবে নিবো? 

সাধারন জ্ঞানের প্রস্তুতি (General Knowledge Preparation)


সাধারন জ্ঞানের এ অংশে MCQ পরীক্ষা হবে ৪০ নম্বরের। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে। 
এ পরীক্ষায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পঠিত বাংলা ও ইংরেজি সহ চারুকলার বিভিন্ন বিভাগ সম্পর্কিত বিষয় ভিত্তিক প্রশ্ন, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির ইতিহাস,ঐতিহ্য সমসাময়িক ঘটনাবলী প্রভৃতি বিষয়ে প্রশ্ন থাকবে।সুতারং বুঝতেই পারছেন আপনার বাংলা ও ইংরেজী বিষয়ক বেসিক জ্ঞান থাকতে হবে। জানতে হবে সমসাময়িক ঘটনাবলি ও সাধারন জ্ঞান।

প্রস্তুতির শুরুতেই বাজার থেকে যেকোন একটি চারুকলা প্রশ্ন ব্যাংক কিনে নিয়ে বিগত বছরের প্রশ্নগুলো দেখে একটা ধারনা নিতে পারেন এবং সে অনুযায়ী নিজের প্রস্তুতি শুরু করতে পারেন।

সাধারন জ্ঞানের জন্য বাজারে অনেক বই পাওয়া যায় সেখান থেকে একটা বই কিনবেন।  (যেমন : Mp3 বাংলাদেশ বিষয়াবলি/ আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি) 

বাংলা ইংরেজির জন্য পূর্বের পড়া বিষয়গুলো ঝালিয়ে নিতে পারেন। নবম দশম শ্রেনীর বাংলা ব্যকরন বইটি ও বাংলা ১ম পত্রের কবি পরিচিতি অংশগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ন।

ইংরেজি চর্চার জন্য  English For Competetive Exam অথবা Master's English বইটি কিনে নিতে পারেন।

তবে যে অংশটায় ঝামেলাটা হয় বেশি সেটা হল চারুকলা সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন থাকে । যেমন : বিভিন্ন শিল্পীর চিত্রকর্মের নাম। তাছাড়া চারুকলা শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত কিছু বিষয়ে টিকা বা শব্দের অর্থ।  যেমন : বিভিন্ন রঙ, মাধ্যম, ফর্ম, গ্রাফিতি,ইজেল,মিনিয়েচার,মনোক্রম, ইত্যাদি।।
এ বিষয়গুলো নিয়ে আলাদা কোন বই বাজারে পাওয়া যায়না। তবে প্রতিবছর চারুকলা অনুষদের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা একটা কর্মশালার আয়োজন করে। সেখানে তারা এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি একটা বই ও প্রকাশ করে। যদি কেউ চায় চারুকলার পূর্ন প্রস্তুতি নিবে, তবে তারা এ কর্মশালায় অংশগ্রহন করতে পারে বা বইটি যখন তারা বিক্রি করে তাদের কাছ থেকে কিনে নিতে পারে।

এ বছর (২০২০-২০২১) যারা কর্মশালা আয়োজন করছে তাদের লিংক : ত্রিভু- চারুকলা ভর্তি সহায়ক কর্মশালা ২০২
অঙ্কনের প্রস্তুতি ঃ

উপরের আলোচনার মাধ্যমে সংক্ষেপে আমরা সাধারন জ্ঞান অংশটুকু সম্পর্কে জানলাম।
এবার আসি অঙ্কন ( ড্রইং) নিয়ে।  


৬০ নম্বরের ড্রইং পরীক্ষায় সাথারনত আপনাকে ফিগার ড্রইং করতে দেয়া হবে। ধরুন কোন একরুমে ২০-২৫ জন  (বেশি কম হতে পারে) পরীক্ষার্থীর সামনে একজন মানুষকে বসিয়ে দেয়া হবে।
তাঁকে দেখে দেখে আপনাকে  কাগজে আঁকতে হবে । এটাকে ফিগার ড্রইং বলে। 
তো এরজন্য প্রত্যেককে হাফশিট বোর্ড / পেন্সিল / ইরেজার ইত্যাদি নিয়ে যেতে হবে।  

এ অংশে ভালো করার জন্য অবশ্যই আপনাকে পূর্ব থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। যদি কেউ বাসায় নিজ থেকে প্রস্তুতি নিতে চায় তবে তারা  ইউটিউবের হেল্প নিতে পারেন। ফিগার ড্রইং লিখে সার্চ করলে অনেক ভিডিও পাবেন।
সেগুলো দেখে প্রাথমিক ধারনা নিয়ে, আপনার পরিবারের কাউকে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে বসিয়ে,  বাসায় বসেই  আপনি প্রস্তুতি নিতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন বড় কাগজে ( হাফশিট) আঁকতে। 

আর যদি সম্ভব হয় কর্মশালায় অংশ নিতে পারেন। সেটা আপনাকে চারুকলা ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে অনেক সহযোগিতা করবে।

তৃতীয় পর্বটির আলোচনা এখানেই শেষ।

" পড়তে চাইলে চারুকলা " এ সিরিজ লেখার মাধ্যমে আমি চেষ্টা করেছি বাংলাদেশের চারুকলা শিক্ষার বিস্তারিত আলোচনা করার। চেষ্টা করেছি একজন শিক্ষার্থীকে একটা ধারনা দেবার যে চারুকলায় কি কি পড়ানো হয়, কি কি ডিপার্টমেন্ট রয়েছে, সেখান থেকে পড়াশোনা করে ভবিষ্যৎ এ আপনি কিভাবে ক্যারিয়ারকে সাজাতে পারেন এবং এর ভর্তি প্রস্তুতি নিয়ে।

প্রথম পর্বের আলোচনার শুরুতেই বলেছিলাম, গতানুগতিক শিক্ষার বাইরে এসে যারা নিজের প্যাশন বা ভালোলাগাকে নিয়ে সামনে আগাতে চায় তাদের জন্যই মূলত চারুকলা। সুতারং এখানে পড়তে গেলে অবশ্যই বিস্তারিত জেনে বুঝে আসা উচিত। আমাদের অনেকেই শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে বলে না জেনে বুঝে ভর্তি হয়। পরবর্তীতে তারা হয়তো পাশ করে কিন্তু সে শিক্ষাটা আদৌও তেমন কোন কাজে আসে কিনা আমার বোধগম্য নয়। আমি মনে করি উচ্চশিক্ষা সে বিষয়েই করা উচিত, যে বিষয় পড়তে আমার ভালো লাগে। যে বিষয়ে আমি আমার সর্বোচ্চ পরিশ্রম দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবো এবং তাতে আমার কোন খারাপ লাগা লাগবে না। 

তো সবশেষে অনুজ যারা রয়েছো,  তাদের প্রতি অনুরোধ, ভেবে সিদ্ধান্ত নিও। অন্যকোথাও চান্স পাওনি, হয়তো চারুকলায় চান্স পেয়েছো। তবে এ বিষয়ে ভালোলাগা নেই। সেরকম পরিস্থিতিতে পড়লে,  শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য,  এ বিষয়ে পড়তে না আসাই ভালো। 


সবার জন্য শুভকামনা ♥ 


পূর্বের লেখাটি পড়তে চাইলে ঃ Click Here
Previous Post Next Post

Ads

Ads