ঢাবি চারুকলা অনুষদের বিভিন্ন বিভাগ । পড়তে চাইলে চারুকলা ঃ পর্ব - ০২
বিগত পর্বে আলোচনা করেছি বাংলাদেশের কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ থেকে আপনারা চারুকলায় গ্রাজুয়েশন করতে পারবেন।
এ পর্বে চারুকলার বিভিন্ন বিভাগসমূহ ও তাদের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করছি
আলোচনার সুবিধার্থে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বিভাগ সমূহ নিয় আলোকপাত করছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ৮ টি বিভাগ রয়েছে। অনেকেই সে সম্পর্কে অবগত নন। অনেকেই জানেন যে চারুকলা মানে একটাই বিভাগ। কিন্তু চারুকলায় রয়েছে বিরাট ক্ষেত্র ও নানা মাধ্যম। এর উপর ভিত্তি করে কাজের ক্ষেত্রও অালাদা। তবে যে বিভাগেই আপনি থাকেন না কেনো আপনাকে ড্রইং জানতেই হবে এবং এ জ্ঞানটা টা থাকলে যে কোন বিভাগ থেকে পড়াশোনা করেই, আপনি এই সৃজনশীল দুনিয়ায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।
প্রথমেই বলেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা অনুষদে ৮ টি বিভাগ রয়েছে। নিচে সে বিভাগগুলোর পাঠক্রম নিয়ে সংক্ষেপে অালোচনা করা হল :
১. অংকন ও চিত্রায়ন বিভাগ (Dept. of Drawing & painting)
সুকুমার কলা নামক যে বিভাগটিকে নিয়ে ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট অব আর্টস যাত্রা শুরু করেছিল ১৯৬৩ সালে সেই বিভাগেরই নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ডিপার্টমেন্ট অব ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং বা অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগ। প্রতিষ্ঠালগ্নে এই বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এর প্রতিষ্ঠাতা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও শিল্পী আনোয়ারুল হক।
এ বিভাগে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিবছর ৩৫ জন শিক্ষার্থী নেয়া হয়। তারা ৪ বছর মেয়াদী বি.এফ.এ অনার্স কোর্স সম্পন্ন করে ২ বছর মেয়াদী এম.এফ.এ ( মাস্টার্স) কোর্স করে থাকেন।
এই বিভাগে ছাত্র-ছাত্রীরা ছবি আঁকার যাবতীয় কলা-কৌশল এবং পেন্সিল, কালি-কলম, চারকোল, জলরং, তেলরং ও অ্যাক্রেলিকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে হাতে-কলমে শিক্ষা লাভ করে থাকে, পাশাপাশি শিল্পকলার ইতিহাস ও নন্দনতত্ত্ব বিষয়েও তারা শিক্ষা গ্রহণ করে। প্রথম বর্ষ থেকে ধাপে ধাপে পেন্সিল, জলরং, তেল রং, এক্রেলিক ইত্যাদি মাধ্যমের সাথে পরিচয় করানো হয়। যার মাধ্যমে চিত্রশিল্পের রস আস্বাদন করে বিভিন্ন মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী তার শিল্পভাবনা ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয় ।
অংকন ও চিত্রায়ন ভালোবেসে যারা নিজেদেরকে চিত্র শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তাদের প্রথম পছন্দ অংকন ও চিত্রায়ন বিভাগ। দেশে ও বিদেশে এই বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণে ও গবেষণা কর্মে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত শিল্পচর্চা করে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করছেন এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর করে তুলছেন।
এ বিভাগ একজন শিক্ষার্থীকে ড্রইং ও পেইন্টিং এ দক্ষ করে তুলতে সাহায্য করবে। যার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী ইলাস্ট্রেশন, পোট্রেট, ক্যারিকেচার, ল্যান্ডস্কেপ পেইন্টিং, এ্যাবস্ট্রাক্ট পেইন্টিং সহ নানা বিষয়ে নিজের ক্যারিয়ারকে সামনে এগিয়ে নিতে পারবেন।
২. গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগ (Dept. of Graphic Design)
গ্রাফিক ডিজাইন,চারুকলা অনুষদের আটটি ডিপার্টমেন্টের মধ্যে একটি। ১৯৪৮ সালে চারুকলার প্রতিষ্ঠার সময় যে দুটি ডিপার্টমেন্ট নিয়ে চারুকলা ইনস্টিটিউট যাত্রা শুরু করেছিল তার মধ্যে একটি হচ্ছে গ্রাফিক ডিজাইন। যাকে সেইসময় কমার্শিয়াল আর্ট ডিপার্টমেন্ট নামে ডাকা হতো।
গ্রাফিক ডিজাইন ডিপার্টমেন্টের যাত্রা শুরু হয় কামরুল হাসানের নেতৃত্বে। কাইয়ুম চৌধুরী থেকে সমরজিৎ রায় চৌধুরী, ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস,নাইমা হক, মামুন কায়সার এর মতো প্রবীণগুণী চিত্রশিল্পী এবং গ্রাফিক ডিজাইনার এ ডিপার্টমেন্ট আমাদের উপহার দিয়েছে।
এই ডিপার্টমেন্ট চারুকলার অন্যান্য ডিপার্টমেন্ট থেকে সামান্য আলাদা। এই ডিপার্টমেন্টে শিক্ষার্থীদের শিখানো হয় শিল্পকলার ব্যবহারিক চর্চা।
পোস্টার, বুক কভার ডিজাইন, ক্যালিগ্রাফি, টাইপোগ্রাফি, ড্রয়িং, ইলাস্ট্রেশন, লোগো , ব্র্যান্ডিং , ফটোগ্রাফি অ্যাড এডভার্টাইজিং , মোশন গ্রাফিক্স , এর মতো আধুনিক সফটওয়্যার নির্ভর কাজও বর্তমানে শেখানো হচ্ছে এ ডিপার্টমেন্টে । এখানে দুটি আধুনিক ল্যাব আছে যেখানে শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার ও আধুনিক সফটওয়্যার ব্যবহার করে কিভাবে শিল্প চর্চা করা যায় তার শিক্ষা নিচ্ছে ।
পেইন্টিং ও অন্যান্য শিল্প মাধ্যম থেকে গ্রাফিক ডিজাইনের একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে । এখানে ডিজাইনার কে তার নিজের শৈল্পিক চিন্তার পাশাপাশি ,স্থান-কাল-পাত্রের কথা মাথায় রেখে কাজ করতে হয়।
গ্রাফিক ডিজাইন এর ব্যবহার শুধুমাত্র শিল্পীর ক্যানভাসে সীমাবদ্ধ নয় এর ব্যবহার ঘুম থেকে উঠে যে পেস্ট দিয়ে দাঁত মাজি, সেখান থেকে দিনশেষে যে বালিশের কভারে মাথা রেখে ঘুমাবো সেখান পর্যন্ত । প্রতিমুহূর্তে আমরা জড়িয়ে আছি গ্রাফিক ডিজাইনের সাথে ।
গ্রাফিক ডিজাইন এমন একটি শিল্প যেটি মানব কল্যাণের জন্য। যা সর্বজনীন । বর্তমানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় গ্রাফিক ডিজাইন শিল্প শিক্ষার অন্যতম প্রধান বিষয় হিসেবে বিবেচিত।
এ বিভাগে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাক্রম অনুযায়ী প্রতিবছর ২৫ জন শিক্ষার্থী নেয়া হয় ।
৩. ছাপচিত্র বিভাগ ( Dept. of Printmaking )
প্রিন্টমেকিং (ছাপচিত্র) হলো একটি শিল্প ভাষা যার মাধ্যমে আধুনিক শিল্পীরা তাদের নিজস্ব ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বাস্তবতাকে পুনর্গঠন করে অভিব্যক্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বারংবার।
১৯৪৮ সালে শিল্পী শফিউদ্দিন আহমেদ এই বিভাগটি প্রতীষ্ঠা করেন। ১৯৪৮ সালে ছাপচিত্র বিভাগের শিক্ষাক্রম চালু হয় গ্রাফিক আর্ট বিভাগ হিসেবে। ১৯৭৮ সালে এর নাম পরির্বতন করে ‘প্রিন্টমেকিং বিভাগ’ করা হয়েছে।
এ বিভাগে প্রথম বর্ষ থেকে পেন্সিল, কালি, জলরং ইত্যাদি প্রাথমিক মাধ্যম গুলোর পাশাপাশি ছাপচিত্র কেন্দ্রিক মাধ্যম: উডকাট, উড এনগ্রেভিং, লিনোকাট, এচিং, এচিং-একুয়াটিন্ট, ড্রাইপয়েন্ট, লিথোগ্রাফ, মনোপ্রিন্ট, মেজোটিন্ট সহ ইত্যাদি মাধ্যমের সাথে পরিচয় করানো হয়। এই মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে নিজের ইচ্ছেমতো হাজারো রকমের নিরীক্ষামূলক শিল্পকর্ম তৈরী করা সম্ভব।
এই বিভাগে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিবছর ১২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারে। তারা ৪ বছর মেয়াদী বিএফএ অনার্স ও ২ বছর মেয়াদী এমএফএ (মাস্টার্স) কোর্স করে থাকে।
এ বিভাগ আপনাকে সীমিত কিছু রঙের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ ছবি কিভাবে সম্পন্ন করতে হয়, তা ভাবতে শেখাবে। এতে করে আপনার ভেতর তৈরী হবে সৃজনশীলতা ও নিজের মত করে বিষয়বস্তুকে দেখার এক অনন্য দৃষ্টি ।
যার মাধ্যমে আপনি বইয়ের প্রচ্ছদ, ইলাস্ট্রেশন, পোর্ট্রেট, পোস্টার ডিজাইন, গ্রাফিক নোভেল ইত্যাদি নানা বিষয়ে দক্ষ হতে পারবেন নিঃসন্দেহে। এবং এই বিভাগ থেকে পড়ার পর গ্রাফিক ডিজাইন সহ সকল আধুনিক কর্মশাখায় অনেক বেশি সাফল্য পাওয়া সম্ভব।
৪. ভাস্কর্য বিভাগ ( Dept. Of Sculpture )
বাংলাদেশের আধুনিক শিল্প শিক্ষার শুরুর দিকটায় ভাস্কর্য বিভাগ প্রতিষ্ঠিত না হলেও সময়ের প্রয়োজনে স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৬৩ সালে।তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই চারুকলা অনুষদ মহাবিদ্যালয়ে রুপান্তরিত হয়। বহুমাত্রিক শিল্পী অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক এর হাত ধরে এই বিভাগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
ভাস্কর্য একটি ত্রিমাত্রিক শিল্প। পৃথিবীর প্রাচীন ইতিহাস ও সভ্যতার শুরু থেকেই যার প্রভাব আজ পর্যন্ত ব্যাপক ও বিস্তৃত। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলে যেকোন দেশের শিল্পের গতিপ্রকৃতি, আসে নতুনত্ব ও বৈচিত্র্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ভাস্কর্য বিভাগে আসন সংখ্যা ১০। প্রতিবছর প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের এই বিভাগ চয়েস দিয়ে মেধাক্রম অনুযায়ী পেতে পারে আসন শূন্য থাকা সাপেক্ষে।
A
এই বিভাগে অনার্সে (বেসিক ডিজাইন,অংকন,তক্ষন,মডেলিং এবং ঢালাই, রচনা অগ্রসর) এবং মাস্টার্স পর্যায়ে ভাস্কর্য নিরীক্ষার সুযোগ রয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থীদের ম্যাটেরিয়াল ও বিষয় নির্ধারণ এর পূর্ন স্বাধীনতা রয়েছে। একই সাথে প্রতি বর্ষে এক ও একাধিক শিল্পকলার ইতিহাস সংক্রান্ত কোর্স পরানো হয়,যা ব্যাবহারিক কাজের বিশ্লেষণ ও ধারনার জায়গা, কাজের মান বুঝতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।রয়েছে 'প্রকল্প ' শিরোনামের একটি নতুন কোর্স,যেখানে যে কোন মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তার কাজ উপস্থাপন করতে পারে। ডিজিটাল মাধ্যমে থ্রিডি এনিমেশন, পারফর্মেন্স আর্ট,ল্যান্ড আর্ট নিয়ে এই কোর্সে শিক্ষার্থীরা সক্রিয়।
৫। প্রাচ্যকলা বিভাগ ( Dept. of Oriental Art )
৬। কারুশিল্প বিভাগ ( Dept. of Craft )
৭। মৃৎশিল্প বিভাগ ( Dept. of Ceramics )