Study In Fine Art | পর্ব - ০২ | ঢাবি চারুকলা অনুষদের বিভিন্ন বিভাগ


ঢাবি চারুকলা অনুষদের বিভিন্ন বিভাগ । পড়তে চাইলে চারুকলা ঃ পর্ব - ০২


বিগত পর্বে আলোচনা করেছি বাংলাদেশের কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ থেকে আপনারা চারুকলায় গ্রাজুয়েশন করতে পারবেন।

এ পর্বে চারুকলার বিভিন্ন বিভাগসমূহ ও তাদের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করছি

আলোচনার সুবিধার্থে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বিভাগ সমূহ নিয় আলোকপাত করছি। 



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ৮ টি বিভাগ রয়েছে। অনেকেই সে সম্পর্কে অবগত নন। অনেকেই জানেন যে চারুকলা মানে একটাই বিভাগ। কিন্তু চারুকলায় রয়েছে বিরাট ক্ষেত্র ও নানা মাধ্যম। এর উপর ভিত্তি করে কাজের ক্ষেত্রও অালাদা। তবে যে বিভাগেই আপনি থাকেন না কেনো আপনাকে ড্রইং জানতেই হবে এবং এ জ্ঞানটা টা থাকলে যে কোন বিভাগ থেকে পড়াশোনা করেই,  আপনি এই সৃজনশীল দুনিয়ায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন। 


প্রথমেই বলেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা অনুষদে ৮ টি বিভাগ রয়েছে। নিচে সে বিভাগগুলোর পাঠক্রম নিয়ে সংক্ষেপে অালোচনা করা হল : 

১. অংকন ও চিত্রায়ন বিভাগ  (Dept. of Drawing & painting)

সুকুমার কলা নামক যে বিভাগটিকে নিয়ে ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট অব আর্টস যাত্রা শুরু করেছিল ১৯৬৩ সালে সেই বিভাগেরই নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ডিপার্টমেন্ট অব ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং বা অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগ। প্রতিষ্ঠালগ্নে এই বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এর প্রতিষ্ঠাতা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও শিল্পী আনোয়ারুল হক।

এ বিভাগে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিবছর ৩৫ জন শিক্ষার্থী নেয়া হয়। তারা ৪ বছর মেয়াদী বি.এফ.এ অনার্স কোর্স সম্পন্ন করে ২ বছর মেয়াদী এম.এফ.এ ( মাস্টার্স)  কোর্স করে থাকেন। 

এই বিভাগে ছাত্র-ছাত্রীরা ছবি আঁকার যাবতীয় কলা-কৌশল এবং পেন্সিল, কালি-কলম, চারকোল, জলরং, তেলরং ও অ্যাক্রেলিকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে হাতে-কলমে শিক্ষা লাভ করে থাকে, পাশাপাশি শিল্পকলার ইতিহাস ও নন্দনতত্ত্ব বিষয়েও তারা শিক্ষা গ্রহণ করে। প্রথম বর্ষ থেকে ধাপে ধাপে পেন্সিল,  জলরং, তেল রং,  এক্রেলিক ইত্যাদি  মাধ্যমের সাথে পরিচয় করানো হয়। যার মাধ্যমে  চিত্রশিল্পের রস আস্বাদন করে বিভিন্ন মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী তার শিল্পভাবনা ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয় ।

অংকন ও চিত্রায়ন ভালোবেসে যারা নিজেদেরকে চিত্র শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তাদের প্রথম পছন্দ অংকন ও চিত্রায়ন বিভাগ। দেশে ও বিদেশে এই বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণে ও গবেষণা কর্মে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত শিল্পচর্চা করে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করছেন এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর করে তুলছেন।

এ বিভাগ একজন শিক্ষার্থীকে  ড্রইং ও পেইন্টিং এ দক্ষ করে তুলতে সাহায্য করবে। যার মাধ্যমে  একজন শিক্ষার্থী ইলাস্ট্রেশন,  পোট্রেট,  ক্যারিকেচার,  ল্যান্ডস্কেপ পেইন্টিং, এ্যাবস্ট্রাক্ট পেইন্টিং সহ নানা বিষয়ে নিজের ক্যারিয়ারকে সামনে এগিয়ে নিতে পারবেন।


২. গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগ  (Dept. of Graphic Design)  

গ্রাফিক ডিজাইন,চারুকলা অনুষদের আটটি ডিপার্টমেন্টের মধ্যে একটি। ১৯৪৮ সালে চারুকলার প্রতিষ্ঠার সময় যে দুটি ডিপার্টমেন্ট নিয়ে চারুকলা ইনস্টিটিউট যাত্রা শুরু করেছিল তার মধ্যে একটি হচ্ছে গ্রাফিক ডিজাইন।  যাকে সেইসময় কমার্শিয়াল আর্ট ডিপার্টমেন্ট নামে ডাকা হতো।

গ্রাফিক ডিজাইন ডিপার্টমেন্টের যাত্রা শুরু হয় কামরুল হাসানের নেতৃত্বে। কাইয়ুম চৌধুরী  থেকে  সমরজিৎ রায় চৌধুরী, ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস,নাইমা হক, মামুন কায়সার এর মতো প্রবীণগুণী চিত্রশিল্পী এবং গ্রাফিক ডিজাইনার এ ডিপার্টমেন্ট আমাদের উপহার দিয়েছে।

এই ডিপার্টমেন্ট চারুকলার অন্যান্য ডিপার্টমেন্ট থেকে সামান্য আলাদা। এই ডিপার্টমেন্টে শিক্ষার্থীদের শিখানো হয়  শিল্পকলার ব্যবহারিক চর্চা।

পোস্টার, বুক কভার ডিজাইন, ক্যালিগ্রাফি,  টাইপোগ্রাফি, ড্রয়িং, ইলাস্ট্রেশন,  লোগো ,  ব্র্যান্ডিং ,  ফটোগ্রাফি অ্যাড এডভার্টাইজিং , মোশন গ্রাফিক্স , এর মতো আধুনিক  সফটওয়্যার নির্ভর  কাজও বর্তমানে শেখানো হচ্ছে এ  ডিপার্টমেন্টে । এখানে দুটি  আধুনিক ল্যাব আছে যেখানে শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার ও আধুনিক সফটওয়্যার ব্যবহার করে কিভাবে শিল্প চর্চা করা যায় তার শিক্ষা  নিচ্ছে ।

পেইন্টিং ও অন্যান্য শিল্প মাধ্যম থেকে গ্রাফিক ডিজাইনের একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে । এখানে  ডিজাইনার কে তার নিজের শৈল্পিক চিন্তার পাশাপাশি ,স্থান-কাল-পাত্রের কথা মাথায় রেখে কাজ করতে হয়। 

গ্রাফিক ডিজাইন এর ব্যবহার শুধুমাত্র শিল্পীর ক্যানভাসে সীমাবদ্ধ নয় এর ব্যবহার ঘুম থেকে উঠে যে পেস্ট দিয়ে দাঁত মাজি, সেখান থেকে দিনশেষে যে বালিশের কভারে মাথা রেখে ঘুমাবো সেখান পর্যন্ত । প্রতিমুহূর্তে আমরা জড়িয়ে আছি গ্রাফিক ডিজাইনের সাথে ।

গ্রাফিক ডিজাইন এমন একটি শিল্প যেটি  মানব কল্যাণের জন্য। যা সর্বজনীন । বর্তমানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় গ্রাফিক ডিজাইন শিল্প শিক্ষার অন্যতম প্রধান বিষয় হিসেবে বিবেচিত।  

এ বিভাগে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাক্রম অনুযায়ী প্রতিবছর ২৫ জন শিক্ষার্থী নেয়া হয় ।


৩. ছাপচিত্র বিভাগ ( Dept. of Printmaking ) 

প্রিন্টমেকিং (ছাপচিত্র) হলো একটি শিল্প ভাষা যার মাধ্যমে আধুনিক শিল্পীরা তাদের নিজস্ব ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বাস্তবতাকে পুনর্গঠন করে অভিব্যক্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বারংবার।

১৯৪৮ সালে শিল্পী শফিউদ্দিন আহমেদ এই বিভাগটি প্রতীষ্ঠা করেন। ১৯৪৮ সালে ছাপচিত্র বিভাগের শিক্ষাক্রম চালু হয় গ্রাফিক আর্ট বিভাগ হিসেবে। ১৯৭৮ সালে এর নাম পরির্বতন করে ‘প্রিন্টমেকিং বিভাগ’ করা হয়েছে।

এ বিভাগে প্রথম বর্ষ থেকে পেন্সিল, কালি, জলরং ইত্যাদি প্রাথমিক মাধ্যম গুলোর পাশাপাশি ছাপচিত্র কেন্দ্রিক মাধ্যম: উডকাট, উড এনগ্রেভিং, লিনোকাট, এচিং, এচিং-একুয়াটিন্ট, ড্রাইপয়েন্ট, লিথোগ্রাফ, মনোপ্রিন্ট, মেজোটিন্ট সহ ইত্যাদি মাধ্যমের সাথে পরিচয় করানো হয়। এই মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে নিজের ইচ্ছেমতো হাজারো রকমের নিরীক্ষামূলক শিল্পকর্ম তৈরী করা সম্ভব।

এই বিভাগে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিবছর ১২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারে। তারা ৪ বছর মেয়াদী বিএফএ অনার্স ও ২ বছর মেয়াদী এমএফএ (মাস্টার্স) কোর্স করে থাকে।

এ বিভাগ আপনাকে সীমিত কিছু রঙের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ ছবি কিভাবে সম্পন্ন করতে হয়, তা ভাবতে শেখাবে। এতে করে আপনার ভেতর তৈরী হবে সৃজনশীলতা ও নিজের মত করে বিষয়বস্তুকে দেখার এক অনন্য দৃষ্টি ।

যার মাধ্যমে আপনি বইয়ের প্রচ্ছদ, ইলাস্ট্রেশন, পোর্ট্রেট, পোস্টার ডিজাইন, গ্রাফিক নোভেল ইত্যাদি নানা বিষয়ে দক্ষ হতে পারবেন নিঃসন্দেহে। এবং এই বিভাগ থেকে পড়ার পর গ্রাফিক ডিজাইন সহ সকল আধুনিক কর্মশাখায় অনেক বেশি সাফল্য পাওয়া সম্ভব।


৪. ভাস্কর্য বিভাগ ( Dept. Of Sculpture ) 

বাংলাদেশের আধুনিক শিল্প শিক্ষার শুরুর দিকটায়  ভাস্কর্য বিভাগ প্রতিষ্ঠিত না হলেও সময়ের প্রয়োজনে স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৬৩ সালে।তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই চারুকলা অনুষদ মহাবিদ্যালয়ে রুপান্তরিত হয়। বহুমাত্রিক শিল্পী অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক এর হাত ধরে এই বিভাগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

ভাস্কর্য একটি ত্রিমাত্রিক শিল্প। পৃথিবীর প্রাচীন ইতিহাস ও সভ্যতার শুরু থেকেই যার প্রভাব আজ পর্যন্ত ব্যাপক ও বিস্তৃত। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলে যেকোন দেশের শিল্পের গতিপ্রকৃতি, আসে নতুনত্ব ও বৈচিত্র্য। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ভাস্কর্য বিভাগে আসন সংখ্যা ১০। প্রতিবছর প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের এই বিভাগ চয়েস দিয়ে মেধাক্রম অনুযায়ী পেতে পারে আসন শূন্য থাকা সাপেক্ষে। 

A

এই বিভাগে অনার্সে (বেসিক ডিজাইন,অংকন,তক্ষন,মডেলিং এবং ঢালাই, রচনা অগ্রসর) এবং মাস্টার্স পর্যায়ে ভাস্কর্য নিরীক্ষার সুযোগ রয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থীদের ম্যাটেরিয়াল ও বিষয় নির্ধারণ এর পূর্ন স্বাধীনতা রয়েছে। একই সাথে প্রতি বর্ষে এক ও একাধিক শিল্পকলার ইতিহাস সংক্রান্ত কোর্স পরানো হয়,যা ব্যাবহারিক কাজের বিশ্লেষণ ও ধারনার জায়গা, কাজের মান বুঝতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।রয়েছে 'প্রকল্প ' শিরোনামের একটি নতুন কোর্স,যেখানে যে কোন মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তার কাজ উপস্থাপন করতে পারে। ডিজিটাল মাধ্যমে থ্রিডি এনিমেশন, পারফর্মেন্স আর্ট,ল্যান্ড আর্ট নিয়ে এই কোর্সে শিক্ষার্থীরা সক্রিয়।

৫। প্রাচ্যকলা বিভাগ Dept. of Oriental Art )

ভৌগলিক অবস্থান ও দর্শনগত দিক বিবেচনা করলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যিক
প্রেক্ষাপটে ভিন্নতা দেখতে পাওয়া যায়। এই ভিন্নতার উপর নির্ভর করে পৃথিবীকে মূলত প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ যেমন⎯ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, চীন, জাপান, কোরিয়া, পারস্য প্রভৃতি অঞ্চলেও এই ভিন্নতা দেখতে পাওয়া যায়। প্রাচ্যের দেশগুলোর এই ভিন্নতা শিল্পকলার ক্ষেত্রেও সমানভাবে বিদ্যমান।

বাংলাদেশে শিল্পী জয়নুল আবেদিনের হাত ধরে প্রাতিষ্ঠানিক চারুকলা শিক্ষার সূচনালগ্ন থেকেই এদেশের শিল্পীদের মধ্যে ঐতিহ্য সচেতনতা দেখতে পাওয়া যায়। ফলশ্রতিতে বাংলাদেশে
চারুকলা শিক্ষায় ১৯৫৫ সালে প্রাচ্যকলা বিভাগ অন্তর্ভূক্ত হয়।
বাংলাদেশে চারুকলার অন্তর্ভূক্ত প্রাচ্যকলা বিভাগে সাধারনত প্রাচ্যচিত্রকলাকে কেন্দ্র করেই বিভিন্ন মাধ্যম ও বিষয় নিয়ে চর্চা করা হয়। প্রাচ্যকলার বিষয় ও মাধ্যমগত দিক চারুকলার অন্যান্য বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক।
মাধ্যম হিসেবে এখানে জলরঙের ধোঁয়া পদ্ধতি, ফ্রেস্কো, টেম্পেরা, অ্যাক্রেলিক, নতুন মাধ্যমে প্রাচ্যকলা ইত্যাদি নানা মাধ্যম নিয়ে শিক্ষার্থীদের চর্চা করানো হয়। প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্যকলা বিভাগে বিএফএ সম্মান ১ম বর্ষে ১৫ টি আসন বরাদ্দ থাকে। শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
চারুকলা অনুষদে ‘চ’ ইউনিটের মাধ্যমে ভর্তি পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করে মেধাতালিকার পছন্দক্রম অনুসারে ভর্তি হতে পারে। এখানে চার বছর মেয়াদি বিএফএ সম্মান ও দুই বছর মেয়াদি এমএফএ কোর্স চালু রয়েছে।


প্রাচ্যকলাতে অধ্যয়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এদেশের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যিক প্রেক্ষাপট নিয়ে সচেতনতা তৈরি হয়। ফলে কর্মক্ষেত্রে এর প্রভাব পরে। বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির সাথে সাথে দেশের সাংস্কৃতিক উন্নতিও চোখে পরার মত। দেশীয় নানা পণ্য সামগ্রী থেকে শুরু করে ডিজিটাল প্লাটফর্মেও শিল্পের প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়। বিদেশী সংস্কৃতিকে দূরে রেখে সকল ক্ষেত্রেই প্রাচ্যকলার বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন রেখে কাজ করা সম্ভব। এতে করে দেশের মানুষের মধ্যে ঐতিহ্য সচেতনতা তৈরি হবে। দেশের যেকোন স্থানে সকল মানুষের মধ্যে ঐতিহ্য সচেতনতা তৈরিতে প্রাচ্যকলায় অধ্যয়নরত শিল্পীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।


৬। কারুশিল্প বিভাগ Dept. of Craft )


কারুশিল্পের ইতিহাস বাংলাদেশ তথা বিশ্ব-শিল্পকলায় বহু প্রাচীন হলেও বাংলাদেশে এই মাধ্যমটি প্রাতিষ্ঠানিক অন্তর্ভুক্তি লাভ করে জয়নুল আবেদিনের হাত ধরে। চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিল্পাচার্যের একান্ত ইচ্ছায় ১৯৬৭ সালে কারুশিল্প বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়। শিল্পকলার ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় প্রাচীনকাল থেকে বাংলাদেশের কারুশিল্প এক গৌরবোজ্জ্বল স্থান দখল করে রয়েছে। এর মধ্যে মসলিন, জামদানি, নকশি কাঁথা, শীতল পাটি, পটচিত্র, সখের হাঁড়ি, লক্ষ্মীসরা, পুতুল, কাঠ, বাঁশ, বেত, মেটাল সামগ্রী ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এই পরিপ্রেক্ষিতে কারুশিল্প বিভাগের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে গতানুগতিক কারুশিল্পের বিপরীতে আধুনিক ও যুগোপযোগী সৃজনশীল কারুশিল্প বিকাশে শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া। এ বিভাগের পাঠক্রমকে প্রধান দুটি উদ্দেশ্যে বিভক্ত করা হয়েছে।

১। ব্যবহারিক উদ্দেশ্য

২। সৃজনী শিল্পের উদ্দেশ্য

সম্যক জ্ঞান ও সুস্পষ্ট ধারণা নিয়ে শিক্ষার্থীরা এই দুটি উদ্দেশ্যে শিল্পচর্চা করবে। এছাড়াও দেশে ও বিদেশে ব্যবহারিক কারুশিল্পে বাণ্যজ্যিক দিক চিন্তা করে শিক্ষার্থীরা যেন আধুনিক কারুশিল্প প্রস্তুত করতে পারে সেই উদ্দেশ্যে বি. এফ. এ. সম্মান পাঠ্যক্রম বিন্যস্ত করা হয়েছে। কারুশিল্প বিভাগে এম. এফ. এ. পাঠ্যক্রমের উদ্দেশ্য কারুশিল্পসহ শিল্পকলার সকল ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের নিরীক্ষা ও গবেষণায় উদ্বুদ্ধ ও দক্ষ করে তোলা। সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করার মাধ্যমে নিজের কাজের প্রতি কৌশলগত দক্ষতা, আত্মবিশ্বাস নিরীক্ষা সমালোচনা এবং বিশ্লেষণ দক্ষতার মাধ্যমে শিল্পকর্মকে আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করা। এছাড়া, এম. ফিল. ও পিএইচ. ডি. প্রোগ্রাম চালু রয়েছে।

এই বিভাগে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিবছর ১৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারে ।


৭। মৃৎশিল্প বিভাগ  Dept. of Ceramics )


শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের উদ্যোগে ১৯৬১ সালে শিল্পী মীর মোস্তফা আলী মৃৎশিল্প বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠালগ্নে এই বিভাগটিতে ৫ (পাঁচ) জন ছাত্র নিয়ে ক্লাস শুরু হয়। মীর মোস্তফা আলী ছিলেন গভর্নমেন্ট আর্ট ইনস্টিটিউটের তৃতীয় ব্যাচের ছাত্র। তিনি ব্যবহারিক চিত্রকলা বিভাগ থেকে অধ্যয়ন সম্পন্ন করার পর ইংল্যান্ডে স্টুডিও-সিরামিক এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিরামিকের ওপর শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরবর্তীসময়ে চারুকলা ইনস্টিটিউটে শিক্ষক হিসাবে যোগদানের মাধ্যমে মৃৎশিল্প বিভাগ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। ১৯৬২ সালে এশিয়া ফাউন্ডেশন কর্তৃক অনুদানপ্রাপ্ত হয়ে এই বিভাগটি পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে। তাদের সহযোগিতায় কোইচি তাকিতা (জন্ম ১৯২৭ Karasuyama-Machi, Tochigi Prefecture, Japan) নামে একজন জাপানি মৃৎশিল্পী আসেন এই বিভাগটি গঠনে সাহায্য করতে। তিনি প্রায় ৪ (চার) বৎসর এই বিভাগে শিক্ষকতা করেন। বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা, সাহায্যকারী শিক্ষক এবং সর্বোপরি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সার্বক্ষণিক অনুপ্রেরণায় বাংলাদেশের শিল্পকলায় সংযোজিত হয় একটি অবিচ্ছেদ্য মাধ্যম মৃৎশিল্প।

এ বিভাগেরও প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে গতানুগতিক মৃৎশিল্পের  বিপরীতে আধুনিক ও যুগোপযোগী সৃজনশীল মৃৎশিল্প বিকাশে শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া। এই বিভাগে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিবছর ১০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারে ।


৮। শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগ  Dept. of History Of Arts )


চারুকলা অনুষদের বাকি সাতটি বিভাগ থেকে ব্যাতিক্রমধর্মী এই বিভাগটি । কেননা এই বিভাগটি সম্পূর্ণ তাত্ত্বিক। ১৯৬৩ সালে তৎকালীন চারুকলা শিক্ষায়তনে শিল্পকলার ইতিহাস বিষয়টি পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৯ সালে অনিবার্যতার মধ্য দিয়ে এটি স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এই বিভাগে ৪ বছরের বি.এফ.এ (সম্মান)  ও ২ বছরের এম.এফ.এ কোর্সের পাশাপাশি এমফিল ডিগ্রী অর্জনের সুযোগও রয়েছে।

এই বিভাগে বিশ্ব শিল্পকলার অতীত,বর্তমান,দেশজ ঐতিহ্য ও আধুনিকতা,নন্দনতত্ত্ব, শিল্পতত্ব, শিল্প সমালোচনা প্রভৃতি বিষয়াবলি কেন্দ্রিক পাঠ্যসূচী অনুসরণ করা হয়। একটি শিল্পকর্মের সাথে জড়িয়ে থাকা প্রত্যেকটি বিষয় যেমন-শিল্পীর চিন্তা,চেতনা,দর্শন,সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ভৌগলিক,ধর্মীয় প্রেক্ষাপট,পৃষ্ঠপোষক,শিল্পকর্ম কিভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করে,পরিবর্তন আনে,শিল্পকর্ম সৃষ্টির উপকরণ করণকৌশল,শিল্পের সমালোচনা এমনই সব বিস্তৃত বিষয় নিয়ে শিল্পকলার ইতিহাস।
তাই এই বিভাগে পড়াশোনার পরিধিও বিস্তৃত।
এই বিভাগে পড়াশোনা করা একজন শিক্ষার্থী নিজেকে শিল্পতাত্বিক,শিল্প সমালোচক, শিল্পগবেষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জাদুঘর ও আর্ট গ্যালারীর কিউরেটর,বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিল্প নির্দেশক হিসাবেও এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়োজিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন চারুকলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাত্বিক পড়াশোনার জন্য এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
আমাদের দেশে শিল্প সমালোচনা ও শিল্পের তাত্বিক বিষয়াবলি নিয়ে কাজের ক্ষেত্রগুলো এখনো সুদৃঢ় অবস্থানে না পৌঁছলেও বহির্বিশ্বে এ বিষয়গুলো অত্যন্ত জনপ্রিয়। আর শিল্পকলার ইতিহাস বহির্বিশ্বে অত্যন্ত চাহিদাসম্পন্ন একটি বিষয়। তাই এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে দেশের বাইরে গিয়ে সম্মৃদ্ধ পেশাজীবন গড়ে তোলারও সুযোগ রয়েছে।

এ লেখাটি তৈরি করতে আমাকে যারা সাহায্য করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। 
ইশিতা শারমিন সায়মা (শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগ)
ইরতিজা কাগজী (গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগ)
শাকিল মৃধা (ছাপচিত্র বিভাগ)
জিল্লুর রহমান কায়েস (ভাস্কর্য বিভাগ)

পরবর্তী পর্বে আলোচনা করা হয়েছে চারুকলা অনুষদের ভর্তি প্রক্রিয়া ও প্রস্তুতি নিয়ে।
লেখাটি পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।


ধন্যবাদ। 

Previous Post Next Post

Ads

Ads